একগুচ্ছ কবিতা । এইচ বি রিতা
নিউজ টাইমস ২১ ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১১ এপ্রিল ২০২১, ১০:৪৯:১৬ অপরাহ্ন
ক্যাপলেন
সেদিনটা ছিল বড় ব্যথাতুর
আকাশের বিশাল বুকে ছিল শুধু মেঘ
অশ্রু ঝড়েছিল কি?
মনে নেই।
সুঠাম দেহের বাম পাশটায় মনে পড়ে
বিষাক্ত এক দস্যু কামড়ে ধরেছিল
জন্মের বৃত্তান্ত খোঁজা তখন অমূলক ছিল
প্রেম? বুঝেনি ব্যাকরণ
বিষাক্ত দস্যুটা নির্মুল করাই ছিল
জন্ম নেবার একমাত্র কারণ!
সাদা শার্ট পরিহিত সে এসেছিল
ঠিক মধ্য দুপুরে
বলেছিলাম, আমি কি মারা যাচ্ছি?
বলেছিল সে, তুমি ঠিক হয়ে যাবে
বিশ্বাস হয়নি
বললাম, সহ্য হয়না
সে হাতটি চেপে ধরল! বলল,
বলেছি তো! তুমি মারা যাচ্ছো না
নিজের অজান্তেই হাতটি শক্ত করে চেপে ধরলাম
বললাম, দয়া করো! আমাকে বাঁচাও
আমি বাঁচতে চাই
দেখো,
আজ আকাশের বুকে কেবল মেঘের ঘনঘটা
এখানে সূর্য উঠেনা বহুদিন।
সে আমার হাত দু’টো আরো শক্ত করে চেপে ধরলো
বলল, আমি আছি। তাকাও আমার দিকে
তাকালাম!
সেদিন তাঁর চোখে কিছু একটা ছিল
কিছু একটা, ঠিক কি ছিল জানিনা
মনে হল, সত্যিই আমি মারা যাচ্ছিনা
তারপর,
সত্যিই আমি মারা যাইনি।
কি ছিল তার চোখে?
বিশ্বাস, ভরসা, আশ্রয়?
এখনো আবিস্কার করতে পারিনি।
ক্যাপলান! আমার হিরো।
লড়াই করার সাহস দিয়েছিল যে।
প্রয়োজন
তখন প্রয়োজন ছিলনা নীল আকাশ
শাপলার ঝিল, শিউলি তলায় ভোর
মালতীলতা খোঁপায় বিরহী নারীর,
শুভ্রাকাশে আঁচল উড়িয়ে
সরু কোমরে কারো কামুকতা!
প্রয়োজন ছিলনা নীল খামের প্রেম,
মধ্যরাতের গোঙানি।
অহেতুক রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি ছিল
কেবলই নিরর্থক; বিক্ষিপ্ত ভোগ বিলাস।
তখন প্রয়োজন ছিলনা,
খোলা আকাশের বুকে বিষণ্ণতার আলোড়ন
নির্বাক শোকে ব্যস্ত শহুরে বাতাস,
শূন্যতা ভরাট বুকে; অসংখ্যবার কারো উপস্থিতি।
আজ, এখন
তোমাকে জানার পর,
শব্দের অন্ধকারে একাকীত্বের উৎস জানা গেল
সাহস রেখে বুকে চলতি পথে মনে হলো,
অরণ্যের আড়ালে কেমন বুনো গন্ধ ছিল।
আজ, এখন
বুকের আড়ালের উষ্ণতা বিদ্রোহ ঘোষণা করে
তোমার অদৃশ্য উপস্থিতি, নিঃশ্বাস চেপে ধরে
মুখের কাছে, বুকের কাছে দু’টি আহত চোখ
ভীষণ প্রয়োজন; আজ প্রয়োজন।
অসুখী শহর
শহরটির আজ অসুখ করেছে
সংক্রমিত ‘কিছু একটা’
স্বৈরী বাতাস, দীপ্তিময় ভোর
অস্তমিত বিকালে ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপে
হু হু করে উড়ছে ‘কিছু একটা!’
বিশেষায়িত দৃষ্টিতে বিষক্রীয়া তড়িৎ ঢুকে যাচ্ছে,
আইন্সটাইন মৃত মগজে।
এ অসুখ ফুসফুস প্রদাহ নয়,
চিন্তা, বুদ্ধি, উদ্ভাবনীশক্তি, সেরেব্রামের সবটুকু খায়
এ অসুখ আমার-তোমার বোধটুকু খায়।
এ শহর আজ রাবণের বেশে;
স্বচ্ছ নিঁপুন চোখগুলো খায়।
এ শহরে আজ আকাশ নেই
সন্ধার বাতাসে উড়ে যাওয়া শালিক নেই
পোশাকহীন শহরের গায়ে, শ্লীলতার সংজ্ঞা নেই
এখানে উঠোন জুড়ে কুয়াশার আড়ালে কেবল,
জহুরী চাঁপা অযত্নে গোঙ্গায়।
এ শহরে আজ কিছু নেই।
ইশতেহার
এ যাত্রায় বেঁচে গেলে,
পৃথিবী দেখবো তোমার চোখে।
কঙ্কালসার মানুষের হাড্ডি খু্ঁড়ে দেখে নিব
জন্মের বৃত্তান্ত
মন্দটুকু ছুঁড়ে ফেলে
কৃতদাস কুকুরের মত বলে দিব সবটুকু
তুমি-তোমরা যা দিয়েছিলে আমায়;
কোন এক অস্তমিত গোধূলি লগ্নে।
এ যাত্রায় বেঁচে গেলে,
অনাদিকালের দহন উপেক্ষা করে
রক্ত, ঘাম, অশ্রু নয়,
মালিভা’র জ্যামিতিক নকশায়
সরল চিত্র এঁকে দিব আকাশের বুকে।
বোতামের আড়ালে রহস্যের সবটুকু
বাতাস শুষে নিবে, স্বাধীনতায়।
এ যাত্রায় বেঁচে গেলে,
প্ল্যাটো দর্শন মাড়িয়ে লিখে যাবো সস্তা কাব্য
যুক্তির সীমা ছাড়িয়ে,
অস্তিত্ব রক্ষায় ম্যাটাফিজিকস্ নয়,
ভোরের কুয়াশায় শিশির ঝরা পাতায় দেখে যাবো;
জলকণাদের খুনসুটি।
এ যাত্রায় বেঁচে গেলে,
প্রেম হবে!
তুমি, আমি, আমাদের হৃদয়ে চুম্বনে হবে
জটিলতা হতে আত্মার ক্ষত সারিয়ে
স্নিগ্ধ কোমল প্রান্তরের ঘাসে;
ভালবাসা বিনিময় হবে।
এ যাত্রায় বেঁচে গেলে,
শুধু ভালবাসা-বাসি হবে।
এস্কেইপ রুম
রহস্যে ঘেরা, ব্রেইনসেল গুলোর মত
অজানা এক কুঠুরি
তালাবদ্ধ সময়ে ঠিক দুই বছর!
রূপ, রহস্য, তথ্য-আবিষ্কারে
ঘন্টা ছিলনা যথেষ্ট, পালানো হলো না আর
এস্কেইপ রুমটিতে; মহাবিশ্ব দেখার যাত্রা আমার।
এখানে,
পর্দার আড়ালে কুশলাদিতে বিস্তর এক পৃথিবী
তোমার-আমার সে পৃথিবীর রঙ একই
হেলোসিনেশন নয়, বড় দুটি চোখ মেলে দেখি,
বিশ্ব-বাজারে পণ্যের ব্লাড প্রেসার; নিয়ন্ত্রণহীন
দেখি,
দ্যা হলোকাষ্ট এখনো কারো মগজ খুঁটে খুঁটে খায়
জোসেফ স্ট্যালিনরা ব্র্যান্ড নেইম পোষাকে
দেখি, পতিতার সস্তা মূল্যে এক রাতের মতই
বিক্রি হয়ে যায় নৈতিকতা-বিশ্বাস।
এখানে,
ভীষণ উত্তেজনা দেখি দৌড়ঝাঁপ লড়াইয়ে
দেখি, বুকের ভাঁজে ঘুমায় সাফল্য; নিশ্চিন্তে
একদল শামুকখোল গন্তব্যহীন, দিশেহারা
কিছু ফুটন্ত তাজা দূর্বা ঘাস পদতলিত হয় নিরীহ প্রাণে।
ওদিকে, হীনমন্যতায় অসহায় দুস্থ লোক
চুষে খায় কবির রক্ত-মাংস, পারলে সত্তাটুকু।
এখানে, সব দেখি। দেখা যায়।
কারো চোখের নেশাতুর ইশারা
বুকে পোষা আদিকালের বস্তাবন্ধি ভালবাসার ঢেউ
সব দেখি, সব শুনি।
বিচ্ছিন্নতার রৌদ্র-তাপে, বরফ জমা হীরক পথে
হয়তো খুঁজে দেখিনি শালবন বৌদ্ধ বিহার
ছেঁড়া দ্বীপে বন-ময়ূরী, অথবা
শীতল জলে দেইনি নীলকান্তার মত স্বাধীনতায় গোসল।
তবে,
এখানেও হয় ছোট টবে গমের চাষ, ফুলের বাগান
রোজ ভোরে প্রকৃতি জন্ম দেয় এক একটি সন্তান;
চিরাচরিত নিয়মে
এখানে নিকোলা বেনেডেট্টি বাদ্য-যন্ত্র হাতে
প্রশান্তিতে ঘুম দিয়ে যায় কপাল চুমে
মান্নাদে কাঁদিয়ে যায় কণ্ঠে সুর তোলে।
আবদ্ধ আমার এস্কেইপ রুমটিতে,
একটা কলম, একটা কিবোর্ড আছে
এখানে আমার পুরো পৃথিবী আছে।