সিলেটে ব্যাংকে সক্রিয় প্রতারক চক্র, টাকা জমা দিতে সাহায্যের কথা বলে প্রতারনা
নিউজ টাইমস ২১ ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২০ এপ্রিল ২০২১, ৮:৪২:০১ অপরাহ্ন
সিলেটে অ’ভিনব উপায়ে ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। ভিড়ের সুযোগে সহ’জ-সরল গ্রাহকদের টার্গেট করে চক্রটি প্রতারণার ফাঁদ পাতে। আর এতে পা দিয়ে টাকা খোয়াচ্ছেন গ্রাহকরা।
জানা যায়, চক্রের সদস্যরা গ্রাহকের কাছে এসে খুব দক্ষ ও ভদ্রভাবে টাকা জমা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চায়, সাহায্য করার কথা জানায়। সহ’জ-সরল গ্রাহক তখন সুদর্শন ও স্যুট-টাই পরা ব্যক্তি এবং তার কথার ভঙ্গি দেখে সহ’জেই বিশ্বা’স করে তাদের কাছে জমা দেওয়ার টাকা ও রসিদ দিয়ে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রতারক চক্রের সদস্য ব্যাংক থেকে টাকা তুলে উধাও হয়ে যায়। বিষয়টি যখন গ্রাহক বুঝতে পারেন তখন আর কিছুই করার থাকে না।
চলতি মাসে জিন্দাবাজার, দরগাহ গেট, আম্বরখানা ও বারুতখানার কয়েকটি ব্যাংকের শাখায় এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ রোববার নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার একটি ব্যাংকের গ্রাহকের কাছ থেকে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র। পরে প্রতারণার শিকার দোকান কর্মচারী এসএমপির কোতোয়ালি থা’নায় একটি লিখিত অ’ভিযোগ দায়ের করেন। বন্দরবাজারের করিম উল্যাহ মা’র্কে’টের নুর টেলিকমের স্বত্বাধিকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইস’লাম জানান, তার দোকানের কর্মচারী মাছুম এক লাখ টাকা জমা দিতে ব্র্যাক ব্যাংকে যায়।
দুপুর ১২টার দিকে জমা’র স্লিপ লেখার সময় জনৈক ব্যক্তি নিজেকে ব্যাংকের স্টাফ পরিচয় দিয়ে জানায়-টাকা জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়ে গেছে। ব্যাংক এখন টাকা জমা নেবে না। দোতলার কাউন্টারে গিয়ে টাকা জমা দিতে হবে। এ কথা বলে ওই ব্যক্তি মাছুমের কাছ থেকে স্লিপ ও টাকা নিয়ে ব্যাংকের দোতলায় যায়। ফিরে এসে জানায়-উপরে টাকা দেওয়ার লাইনে একজন আছে। এরপর মাছুমের হাতে স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে জানায়, আপনার নিজে গিয়ে স্লিপ জমা দিতে হবে।
স্লিপ নিয়ে মাছুম দোতলায় যাওবার সুযোগে প্রতারক এক লাখ টাকা নিয়ে ব্যাংক থেকে চ’ম্পট দেয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ব্যক্তি ব্যাংকের কোনো স্টাফ নয়। কোতোয়ালি থা’নার ওসি এসএম আবু ফরহাদ বলেন, অ’ভিযোগ পাওয়ার পর আম’রা ওই ব্যাংকের শাখা পরিদর্শন করেছি। সিসি টিভির ফুটেজও খতিয়ে দেখেছি।
তবে মাস্কে মুখ ঢেকে থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে দুষ্কৃতকারীকে চিহ্নিত করা যায়নি। আম’রা সংশ্লিষ্ট সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি এবং আমাদের ত’দন্ত অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে আম’রা ত’দন্তকাজ চালাচ্ছি। আশা করছি দ্রুতই অ’প’রাধীকে শনাক্ত করা যাবে।
এর আগে নগরীর পাঠানটুলা একটি ব্যাংকের একটি শাখা থেকে আরেক প্রতারক এক বৃদ্ধের ২১ হাজার টাকা একইভাবে নিয়ে যায়। ওই দিন ব্যাংকে গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন ছিল। ওই প্রতারক প্রথমে সবাইকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর পরাম’র্শ দেয়। এরপর জনৈক বৃদ্ধকে বলে, আপনি সিটে বসেন, আমি কাউন্টারে টাকা জমা দিয়ে আসছি। দীর্ঘক্ষণ অ’পেক্ষার পর জমা দিতে যাওয়া ব্যক্তি ফিরে না আসায় বৃদ্ধের স’ন্দেহ হয়।
এরপর ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করেও ওই প্রতারককে চিহ্নিত করা যায়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করে শাখা ম্যানেজার বলেন, ওইদিন সন্ধ্যার পর টাকা জমা হয়েছে কিনা জানতে আসেন ওই গ্রাহক। চেক করে দেখা যায় তার টাকা জমা হয়নি। এরপর তিনি ওই ঘটনা খুলে বলেন।
শাখা ম্যানেজার জানান, জিন্দাবাজার ব্র্যাক ব্যাংকের ও আমাদের শাখার সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দুই ঘটনায় জ’ড়িতকে প্রায় একই রকম মনে হয়েছে। তবে মাস্ক থাকায় পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। এসএমপির অ’তিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, সব থা’না ও ফাঁড়ি ইনচার্জদের প্রতারক চক্রের ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এদের গ্রে’প্তার করে আইনের আওতায় নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষেরও সতর্ক থাকতে হবে। প্রতারণার বিষয়টি তুলে ধরে গ্রাহকদের সতর্ক করার জন্য শাখার ভেতরে-বাইরে একাধিক নোটিশ টানানো এবং কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। সেই সঙ্গে গ্রাহকদেরও সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।