শান্তের সেঞ্চুরীতে বিশাল সংগ্রহে বাংলাদেশ
নিউজ টাইমস ২১ ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২১ এপ্রিল ২০২১, ৫:৫৪:৫৩ অপরাহ্ন
ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের শুরুটা পুরোপুরি নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ম্যাচের প্রথম দিনের প্রথম দুই সেশনই জিতেছে বাংলাদেশ। দুই সেশনে উইকেট পড়েছে ১টি করে, রান হয়েছে ঠিক ২০০।
অগ্রজ ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকে’টে ১৪৪ রানের জুটি গড়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। নড়বড়ে নব্বইয়ে পৌঁছে তামিম আউট হলেও, সেঞ্চু’রি করে রয়ে গেছেন শান্ত। শান্তকে তৃতীয় উইকে’টে সঙ্গ দিচ্ছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দ্বিতীয় সেশন শেষে বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ ৭৫ ওভা’রে ২ উইকে’টে ২৫৪ রান। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চু’রি করে শান্ত ছুটছেন আপন গতিতে। তার নামের পাশে রয়েছে ২৩৮ বলে ১০২ রান। তৃতীয় উইকেট জুটিতে শান্তকে সঙ্গ দিয়ে মুমিনুল খেলছেন ৪৮ রান নিয়ে।
এদিকে উইকে’টে সবুজ ঘাসের আধিক্য থাকলেও, টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল। কিন্তু ইনিংসের দ্বিতীয় ওভা’রেই সাজঘরে ফিরে যান ডানহাতি ওপেনার সাইফ হাসান। তবে বিপদ আর বাড়তে দেননি তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সুরঙ্গা লাকমলের প্রথম ওভা’রেই জোড়া বাউন্ডারি হাঁকান তামিম ইকবাল। ওভা’রের তৃতীয় ও পঞ্চ’ম বলে অনসাইড দিয়েই বাউন্ডারি দুইটি মা’রেন তিনি। কিন্তু বিশ্ব ফার্নান্দোর করার পরের ওভা’রে এর উল্টোটাই করেন সাইফ।
প্রথম পাঁচ বল ডট খেলার পর শেষ বলটি আ’ঘাত হানে তার পায়ে। শ্রীলঙ্কানদের জোড়ালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার কুমা’র ধ’র্মসে’না। ম্যাচের প্রথম রিভিউ নিয়ে সাইফের বিদায় ঘণ্টা বাজান লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারাত্নে, শূন্য রানে ফিরতে হয় সাইফকে।
সঙ্গীকে হারালেও তামিম পরের ওভা’রে আবার হাঁকান বাউন্ডারি। এমনকি বিশ্বর ওভা’রেও তাকে খেলতে দেখা যায় সাবলীলভাবে। এই বাঁহাতি পেসারের করা ইনিংসের ষষ্ঠ ওভা’রে তিন চারের মা’রে ১৪ রান নেন তামিম। একইসঙ্গে ছুঁয়ে ফেলেন টেস্টে ৪৫৩৭ রান করা মুশফিককে।
বিশ্বর করা পরের ওভা’রের প্রথম বলে এক রান নিয়ে মুশফিককে ছাড়িয়ে যান তামিম। মুশফিকের সাতটি টেস্ট কম খেলেই এ রান করে ফেলেছেন বাঁহাতি ওপেনার তামিম। রান তোলার গড়েও এগিয়ে তামিম। মুশফিক রান করেছেন ৩৬.৫৮ গড়ে, অন্যদিকে তামিমের রান এসেছে ৩৮-র বেশি গড়ে।
এদিকে শুরুতে উইকেট হারিয়ে খানিক চাপে পড়লেও, দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তা সামাল দিয়েছেন তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। এরই মধ্যে গড়ে ফেলেছেন পঞ্চাশ রানের জুটি। লাহিরু কুমা’রার করা ইনিংসের ১২তম ওভা’রে ফের তিন চার হাঁকান তামিম। এই ওভা’রেই পূরণ হয় দলীয় পঞ্চাশ।
জুটি ভাঙতে না পেরে বোলিং আক্রমণে একের পর এক পরিবর্তন আনেন লঙ্কান অধিনায়ক। কিন্তু কিছুতেই কোনো কাজ হয়নি লঙ্কানদের। উল্টো যখনই রানের সুযোগ এসেছে তার পূর্ণ ফায়দা নিয়েছেন শান্ত ও তামিম। কখনও দেখে খেলেছেন, আবার কখনও আক্রমণাত্নক হয়ে তুলে নিয়েছেন বাউন্ডারি।
ইনিংসের ১৯তম ওভা’রের প্রথম বলে সিঙ্গেল নেয়ার মাধ্যমে টেস্ট ক্রিকে’টে নিজের ২৯তম ফিফটি পূরণ করেন তামিম। মুখোমুখি ৫২ বলে ১০ চারের মা’রে ব্যক্তিগত মাইলফলক স্প’র্শ করেন তিনি। অন্যপ্রান্তে ইনিংসের ২১তম ওভা’রে জোড়া হাঁকান শান্ত, তামিম একই কী’র্তি দেখান পরের ওভা’রে।
দলীয় শতকের জন্য অ’পেক্ষা করতে হয় ২৪তম ওভা’র পর্যন্ত। এর আগে অবশ্য উইকে’টের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ধনঞ্জয় ডি সিলভা’র নিজের তৃতীয় ও ইনিংসের ২৩তম ওভা’রের দ্বিতীয় বলে আউট সাইড এজ হয়েছিল শান্তর। কিন্তু সেটি গ্লাভসে রাখতে পারেননি উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকভেলা।
পুরো সেশনে এই একটি বাদে আর কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি স্বাগতিকরা। পূর্ণ আধিপত্য বিস্তার করে প্রথম সেশনের ২৭ ওভা’রে ১ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করে ১০৬ রান।
দ্বিতীয় সেশনেও একই আধিপত্য বজায় রাখেন তামিম ও শান্ত। শুরু থেকেই সতর্ক-সাবধানী ব্যাটিং করা শান্ত তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি করেন ইনিংসের ৩৭তম ওভা’রে। বিশ্ব ফার্নান্দোর করা সেই ওভা’রের চতুর্থ বলে থার্ড ম্যান দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে মাইলফলকে পৌঁছান শান্ত।
তামিম যেখানে মাত্র ৫২ বলে ১০ চারের করেন ফিফটি, সেখানে শান্ত পুরোপুরি বিপরীত। তিনি ফিফটি করেন ১২০ বল খেলে। যেখানে ছিল ৭টি চারের মা’র। শান্তর ফিফটির পরপরই সাজঘরে ফিরে যান তামিম। তাদের ১৪৪ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙেন বিশ্ব।
অথচ সেই ওভা’রের প্রথম বলেই আত্মবিশ্বা’সী ড্রাইভে নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে গিয়েছিলেন তামিম। দৃষ্টি সীমানায় চলে এসেছিল ক্যারিয়ারের দশম টেস্ট সেঞ্চু’রি। কিন্তু সেটিই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায়। শুরু থেকে দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা তামিম কাঁ’টা পড়েন নড়বড়ে নব্বইয়ে পা রেখেই।
এই উইকে’টে বিশ্বর কৃতিত্বের চেয়ে তামিমের দায়টাই বেশি। ব্যাক অব লেন্থে পড়া ডেলিভা’রিতে কী’ করবেন তা ঠিক করতে পারেননি তামিম। অদ্ভুত এক অবস্থায় পড়ে ক্যাচ তুলে দেন স্লিপ কর্ডনে দাঁড়ানো লাহিরু থিরিমান্নের হাতে। আউট হওয়ার আগে ১৫ চারের মা’রে ১০১ বলে ৯০ রান করেন এ অ’ভিজ্ঞ ওপেনার।
তামিম ফিরে গেলেও দমে যাননি শান্ত। তৃতীয় উইকেট জুটিতে অধিনায়ক মুমিনুল হককে নিয়ে মন দেন ইনিংস পুনর্গঠনের কাজে। যা বেশ ভালো’ভাবেই করতে থাকেন তিনি। ধনঞ্জয় ডি সিলভা’র করা ৪২তম ওভা’রে ইনসাইড শটে ইনিংসের প্রথম ছক্কা হাঁকান শান্ত।
তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকেন মুমিনুলও। লঙ্কানদের করা প্রতিটি বাজে বলেই বাউন্ডারি হাঁকান টাইগার অধিনায়ক। যার ফলে রানের চাকা কখনও থামেনি বাংলাদেশের। তামিমের পর শান্ত-মুমিনুলের দায়িত্বশীল ব্যাটেই দ্বিতীয় সেশনও নিজেদের করতে পেরেছে সফরকারীরা।