সংস্কারের চাপে হেফাজত
নিউজ টাইমস ২১ ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২২ এপ্রিল ২০২১, ৩:২০:৪২ অপরাহ্ন
রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারকে চাপে ফেলতে হেফাজতে ইস’লামের নেতা মামুনুল হকসহ কয়েকজন নিয়মিত ওয়াজ-মাহফিলে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দিতেন। ভা’রতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বি’রুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে তাঁরা একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। গত মাসে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে একটি বৈঠকে মামুনুলদের মোদিবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। রি’মান্ডে মামুনুল হক অনুসারীদের ‘চাঙ্গা করতে’ এমন বক্তব্য দিয়েছেন বলে দাবি করলেও ত’দন্তে রাজনৈতিক পরিকল্পনার তথ্য পেয়েছে পু’লিশ। কেন্দ্রীয় সহ-অর্থ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর কমিটির সহসভাপতি মুফতি ইলিয়াস হামিদী গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম আ’দালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানব’ন্দিতে বলেছেন, মামুনুল হক জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে ‘আ’ন্দোলন চাঙ্গা’ করেছেন। গ্রে’প্তারকৃত ১২ নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদেও মিলেছে একই রকম তথ্য।
গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহানগরীর সহসাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মা’ওলানা আতাউল্লাহ আমীনকে মোহাম্ম’দপুর থেকে গ্রে’প্তার করে রেব। গতকাল বুধবার কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব, ঢাকা মহানগর সহসভাপতি এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আল্লামা খুরশিদ আলম কাসেমীকে মোহাম্ম’দপুরের বাসা থেকে গ্রে’প্তার করে গোয়েন্দা পু’লিশ (ডিবি)। এ ছাড়া গতকাল বিকেলে মিরপুর সেনপাড়া পর্বতা এলাকা থেকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদ মুফতি শারাফত হোসাইনকে গ্রে’প্তার করা হয়েছে। তিনি মামুনুল হকের ঘনিষ্ঠ বলে জানায় ডিবির সূত্র।
মঙ্গলবার গ্রে’প্তারকৃত সহসভাপতি ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মা’ওলানা কোরবান আলী কাসেমীকে গতকাল সাত দিনের রি’মান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার মহানগর হাকিম আ’দালত। আগেই গ্রে’প্তার হওয়া কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজী ও মঞ্জুরুল ইস’লাম আফেন্দিকে পল্টন থা’নার তিন মা’মলায় ২১ দিনের রি’মান্ড মঞ্জুর করেছেন আ’দালত। এ ছাড়া গাজীপুরের মা’মলার পর এবার মতিঝিলে ২৫ মা’র্চ মোদিবিরোধী নাশকতার মা’মলায় ‘শি’শু বক্তা’ রফিকুল ইস’লাম মাদানীর চার দিনের রি’মান্ড দিয়েছেন আ’দালত।
এদিকে গত সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পু’লিশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে হেফাজত নেতাদের সাক্ষাতে সমঝোতার বিষয়টির অগ্রগতি হয়নি। হেফাজত থেকে মামুনুল হকসহ রাজনৈতিক দলের নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনসহ কড়া তিন দফা নির্দেশনা দিয়ে কঠোর অবস্থানে আছে পু’লিশ প্রশাসন। মা’মলার ত’দন্তে যাঁদের নাম আসছে তাঁদের সবাইকে গ্রে’প্তারের নির্দেশনা আছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা। সূত্র মতে, হেফাজতের রাজনৈতিক নেতাদের কওমি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনায় বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এসব ঘটনায় আর্থিক জালিয়াতির মা’মলাও হতে পারে। অন্যদিকে বৈঠকের পর কর্মসূচি না দিয়ে সমঝোতার অ’পেক্ষায় আছেন হেফাজতের নেতারা। মামুনুল হক বিতর্ক এবং সংগঠনের বেহাল অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন গুঞ্জনও চলছে।
ত’দন্তসংশ্লিষ্ট পু’লিশ কর্মক’র্তারা জানান, বিভিন্ন সময় ওয়াজে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে ধ’র্মপ্রা’ণ অনুসারীদের উত্তেজিত করে তোলেন মামুনুল হক। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, ‘জোশের বশে এমন মন্তব্য করে ফেলেছি। অনুসারীদের চাঙ্গা করতে এমন বয়ান দিই।’ তবে জামায়াতপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং আলাপচারিতায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে বক্তব্য দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নাশকতার কারণে হেফাজত নেতাদের ব্যাপারে হার্ডলাইনে সরকার। নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রে’প্তার চলছে। সমঝোতার প্রস্তাবের পর নতুন কোনো নির্দেশনা নেই। পু’লিশের পক্ষ থেকে হেফাজতে রাজনৈতিক দলের নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন করে কমিটি করার কঠোর শর্ত দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বড় কওমি মাদরাসাগুলো কিভাবে, কারা নিয়ন্ত্রণ করছে, সে ব্যাপারে গোয়েন্দা প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। যাঁরা মাদরাসায় অনিয়ম করেছেন, সেসব হেফাজত নেতার বি’রুদ্ধেও মা’মলা হতে পারে বলে জানায় সূত্র।
এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উত্কণ্ঠার মধ্যে আছেন হেফাজত নেতারা। বৈঠকে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়ে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগও করছেন। পু’লিশের পক্ষ থেকে দেওয়া শর্ত নিয়েও নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছেন তাঁরা। জানতে চাইলে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির ভা’রপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মা’ওলানা মো. মীর ইদরিস বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল—আম’রা সরকারের বি’রুদ্ধে কোনো আ’ন্দোলন করিনি। হেফাজতে ইস’লাম সরকারের বি’রুদ্ধে নয়। ধ’র্মীয় অনুভূতিতে আ’ঘাত এলে আম’রা সংগঠন থেকে প্রতিবাদ করি। আমাদের নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি এবং গ্রে’প্তার বন্ধ করাসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়েছিল।’ এসব দাবি তুলে ধ’রার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী’ জানিয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে জানাবেন বলেছিলেন।’
এদিকে হেফাজত নেতারা মামুনুল হকের বিয়ে নিয়ে বিতর্কের কারণে গো’পনে সালিস বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। মোহাম্ম’দপুরে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় সম্প্রতি হেফাজতের কয়েকজন নেতা মামুনুলকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে মামুনুল হক সোনারগাঁয় রিসোর্টে তাঁর সঙ্গে থাকা নারী জান্নাত আরা ঝর্ণাকে বিয়ে করেছেন বলে দাবি করেন। মামুনুল বিয়েতে উপস্থিত থাকা সাক্ষীদের হেফাজত নেতাদের সামনে হাজির করেন। এ ঘটনার পর হেফাজত নেতারা মামুনুলকে সহযোগিতার ব্যাপারে আশ্বা’স দেন। তবে পরবর্তী সময়ে আরেকটি বিয়ের তথ্য ফাঁ’স এবং ধারাবাহিক বিতর্কের কারণে হেফাজতের কয়েকজন নেতা মামুনুলের প্রতি বির’ক্ত হয়ে উঠেছেন। তাঁদের কয়েকজন প্রয়াত আমির আহম’দ শফীর অনুসারীদের নিয়ে নতুন করে হেফাজতের কমিটি গঠন করতে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ শুরু করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।