মা’রুফদের পাশে দাঁড়াবে কে?
নিউজ টাইমস ২১ ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২২ এপ্রিল ২০২১, ৪:২১:১৪ অপরাহ্ন
‘আচ্ছা, এই যে লকডাউন দিয়েছে, সামনে ঈদ, মানুষ খাবে কী’?’ রাজধানীর জজকোর্ট এলাকায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনে লাইভ চলাকালীন আচ’মকা এমন বক্তব্য দিয়ে রাতারাতি আলোচনায় আসে এক পথশি’শু। তাদের খাবারের দায়িত্ব কে নেবেন- অভুক্ত এই শি’শু তার কথায় এ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে সমাজের কাছে। আলোচনায় আসা ছে’লেটির নাম মা’রুফ। সে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক ও জজকোর্ট এলাকায় থাকে।
পথশি’শুদের কাছ থেকে জানা যায়, আগে বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে খাবার দেওয়া হতো, এখন দেওয়া হয় না। লকডাউনের আগে মানুষের কাছে চেয়ে খেতে পারলেও এখন সে সুযোগও কম। রাস্তায় মানুষ নেই, দোকানপাটও বন্ধ, মানুষের কাজ নেই। তাদের কে খাবার দেবে? কে টাকা দেবে? তারা খাবে কী’?
বিভিন্ন সূত্রে আরও জানা যায়, বাহাদুর শাহ পার্ক, সদরঘাট এলাকায় বর্তমানে অর্ধশতাধিক শি’শু-কি’শোর আছে। তাদের মধ্যে কমবয়সী মে’য়েও কয়েকজন। অধিকাংশ শি’শু-কি’শোরের বাবা-মা নেই। যাদের আছে, তারা নিজেরাই চলার সাম’র্থ্য রাখে না বা সন্তানের খোঁজ নেয় না। ভাসমান এই পথশি’শুরা মানুষের কাছে চেয়ে খায়। অনেকে খাবার দেয়, আবার কেউ মা’রধর করে। লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের খাবারের সংকট বেড়েছে। পথশি’শুদের এ অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তাদের ভিক্ষাবৃত্তি, চু’রি, ছিনতাইয়ে বাধ্য করে। তাদের এ পথে আনতে প্রথমে মা’দকে আসক্ত করে ভা’রসাম্যহীন করে তোলা হয়।
গত মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে বাহাদুর শাহ পার্কে মাটিতে শুয়ে থাকতে দেখা যায় পথশি’শু মা’রুফকে। সে ড্যান্ডির নে’শায় আসক্ত। গতকাল বুধবার দুপুরে শি’শুটির খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, রাত ৩টার দিকে একটি সাদা গাড়িতে কয়েকজন এসে তাকে পাঁচশ টাকা ও জামাকাপড় দেবে বলে রায়সাহেব বাজারের দিকে নিয়ে যায়।
বাহাদুর শাহ পার্কে দেখা যায়, অধিকাংশের হাতে প্লাস্টিকের প্যাকেট। ভেতরে হলদে রঙের এ বস্তু খানিক পরপর মুখে লাগিয়ে টানছে। তাদের ভাষায়, এটা আঠা বা ড্যান্ডি। এটি ব্যবহার করলে শরীরে ঝিমঝিম অনুভূতি সৃষ্টি করে। আর এভাবেই আঠার নে’শায় আসক্ত হয়ে পড়ে তারা।
বাহাদুর শাহ পার্কের ভাসমান শি’শু হৃদয় (১৪) জানায়, সে দীর্ঘদিন পার্কে থাকে। আগে সরকারের পক্ষ থেকে খাবার দেওয়া হলেও এখন দেওয়া হয় না। মানুষের কাছ থেকে চেয়ে খায়। লকডাউনের সময় কোনো বেলা খাবার পায়, কোনো বেলা পায় না।
পথশি’শু মা’রুফের পরিবার ঢাকার মোহাম্ম’দপুরে থাকে। সৎবাবার কারণে সে বাসায় যায় না। সে আগে চু’রি করত। এখন চু’রির পেশা বাদ দিয়ে মানুষের কাছে চেয়ে খায়। তবে চু’রি বাদ দেওয়ায় কেরানীগঞ্জের মামুন নামের এক যুবক তার পায়ুপথে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছু’রিকাঘাত করে।
আরেক শি’শু শাকিলের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জে। কখনও বাহাদুর শাহ পার্ক, কখনও সদরঘাট বা কমলাপুরে থাকে। মানুষের কাছ চেয়ে নেওয়া, নারীদের ব্যাগ টান দেওয়া, চু’রি- এসব করেই খায় সে। তাদের একটি গ্রুপ এসব কাজে বাধ্য করে। লকডাউনে রাস্তায় মানুষ কম, উপার্জন নেই। তাদের খোঁজ কেউ নেয় না। শাকিল সুস্থ একটি জীবন চায়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ আর্থ অ্যান্ড সায়েন্স অনুষদের সাবেক ডিন ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুদ্দিন বলেন, এই শি’শুদের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এসব শি’শু সামাজিক ও অ’প’রাধমূলক কর্মকা’ণ্ড বোঝে না। তারা মা’দক সেবন ও চু’রিকে অ’প’রাধ হিসেবে মনে করে না। আর মা’দক সেবনের কারণে তারা সব সময়ের জন্য ভা’রসাম্যহীন থাকে। তারা ছোট অ’প’রাধ করতে করতে বড় অ’প’রাধ করে ফেলে। সরকারের আলাদা প্রকল্পের মাধ্যমে লেখাপড়া ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে।- সমকাল